Bangladesh And Global Identity

পাকিস্তান হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস এলাকাবাসীকে নির্যাতন করছে

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শব্দটি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ক্ষোভ ও ঘৃণা ছড়িয়েছে এবং এখনও ছড়াচ্ছে, সেটি হলো ‘রাজাকার’। ‘রাজাকার’ শব্দটির সাথে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় ঘটে ১৯৭১ সালে। মাত্র কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ সরকার রাজাকারদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যেটি নিয়ে চলছে বিতর্ক এবং শোরগোল। অভিযোগ উঠেছে যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ব্যক্তির নাম ঢুকেছে রাজাকারের তালিকায়। প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৭১ সালে রাজাকার কারা ছিলেন? আর তাদের ভূমিকাই বা ঠিক কী ছিল?

পাকিস্তান হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘রাজাকার’ একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে ‘স্বেচ্ছাসেবী’। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য ১৯৭১ খুলনার খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তিকে নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ বাহিনীর জন্য সদস্য সংগ্রহ করা হয় এবং তারা প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান অধ্যাপক মামুন। রাজাকার বাহিনী গঠনের পেছনে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন নেতা এ কে এম ইউসুফ, যিনি পরবর্তীতে দলটির নায়েবে আমির হন। মানবতা-বিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে আটক করা হয়েছিল এবং পরে কারাগারেই তার মৃত্যু হয়।

৮ম শ্রেণির এ্যাসাইমেন্ট দেখুন

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং খুলনায় শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’র আহবায়ক ড. এম এ হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স গঠন করা হয়। তিনি জানান, এর অধীনে রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস্ বাহিনী গঠন করা হয়। এই ফোর্সের অধীনে বাঙালীরা যেমন ছিল, তেমনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত উর্দুভাষীদের অনেকে তাতে যোগ দেয়। পাকিস্তান বাহিনী তাদের হাতে অস্ত্রও তুলে দিয়েছিল।

রাজাকারদের ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজাকার বাহিনী ছিল শান্তি কমিটির আওতাধীন। ড. এম এ হাসান বলেন, ১৯৭১ সালের জুন মাসে জেনারেল টিক্কা খান রাজাকার আইন জারি করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনীতে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য ছিল, যারা মাসিক ভাতা পেতেন। ওই সময় প্রতি মাসে রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য দেড়শো’ রুপির মতো ভাতা পেতেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ড. হাসানের বলেন, “যতদূর আমার মনে আছে, একজন রাজাকার সদস্য তখন ১৫০ রুপি ভাতা পেত। স্বাধীনতার পরেও এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল প্রায় ৯০ রুপি।” অনেক রাজাকার সদস্য অবশ্য স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেও কাজ করতেন। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং ড. এমএ হাসান – দু’জনই বলেছেন যে রাজাকার বাহিনীতে যারা কাজ করতেন, তাদের নাম মুক্তিযুদ্ধের সময় সংশ্লিষ্ট থানায় লিপিবদ্ধ ছিল।

ড. হাসান বলেন, রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে অংশ নিতো, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতো, হত্যা করতো কিংবা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতো। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশের ভেতরে বেশ কয়েকটি বাহিনী বা সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এগুলো হচ্ছে – শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস। গবেষকরা বলছেন, যুদ্ধের সময় শান্তি কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জামায়াত ইসলামীর নেতা গোলাম আযম এবং মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়েরউদ্দিন। অন্যদিকে আল-বদর বাহিনীর তিন থেকে পাঁচ হাজার সদস্য ছিল বলে উল্লেখ করেন ড. হাসান। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীরা এ বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে তিনি জানান। বাহিনীটির প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর আমির হন। মানবতবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরে মি. নিজামীকে ফাঁসি দেয়া হয়। এছাড়া আল-শামস বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও ছিল প্রায় ৩,০০০’র মতো।

Leave a Reply