HSC Home Management And Family Life Assignment Answer 2023 – এইচএসসি গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন এ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান – HSC Greho Babosthapona O Paribarik Jibon 5th Week Assignment

 

Read More: HSC Business Organization and Management Assignment

HSC Home Management And Family Life Assignment 2021

2nd, 3rd, 5th, 7th, 8th, 10th, 11th, 12th, 14th, 15th HSC Home Management And Family Life Assignment 2021 is available here.

Check Also: HSC Islamic History and Culture Assignment

এইচএসসি ২০২১ পঞ্চম গৃহ ব্যবাস্থাপনা ও পারিবারিক ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

HSC Home Management and Family Life 5th Week HSC 2021 Assignment

স্তর: এইচএসসি পরিক্ষা ২০২১, বিভাগ: মানবিক; বিষয়:গৃহ ব্যবাস্থাপনা ও পারিবারিক ১ম পত্র, বিষয় কোড:২৮২; মোট নম্বর: ২০, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০৩, এইচএসসি ২০২১ পঞ্চম গৃহ ব্যবাস্থাপনা ও পারিবারিক ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

অধ্যায় ও অধ্যায়ের শিরোনাম:অধ্যায়-দ্বিতীয়; গৃহ ব্যবস্থাপনায় প্রেষণা;

অ্যাসাইনমেন্ট: মূল্যবােধ, লক্ষ্য ও মানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা মূল্যায়ন;

শিখনফল/বিষয়বস্তু:

ক. গৃহ ব্যবস্থাপনায় প্রেষণা সৃষ্টিকারী উপাদান বর্ণনা করতে পারবে;

খ. মূল্যবােধ বিকাশে পরিবারের ভূমিকা মূল্যায়ন করতেপারবে;

গ. লক্ষ্য নির্ধারণের উপায় বর্ণনা করতে পারবে;

ঘ. মান নির্ধারণের মাধ্যম ব্যাখ্যা করতে পারবে;

ঙ. মূল্যবােধ, লক্ষ্য ও মানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে এবং পরিবারের সদস্যদেও এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে পারবে;

নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি):

ক) গৃহ ব্যবস্থাপনায় প্রেষণা সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহের ধারণা;

খ) মূল্যবােধ বিকাশে পরিবারের ভূমিকা;

গ) লক্ষ্য নির্ধারণের উপায়;

ঘ) মান নির্ধারণের মাধ্যম;

ঙ) মূল্যবােধ, লক্ষ্য ও মানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পরিবারের সদস্যদের সচেতনতা মূল্যায়ন;

চ) পাঠ্যপুস্তক, অন্যান্য সহায়ক গ্রন্থ, শ্রেণি শিক্ষক ও অভিভাবকের সহায়তা গ্রহণ;

ছ) ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ;

জ) নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা;

HSC Home Management and Family Life 5th Week HSC 2021 Assignment

গৃহ ব্যবস্থাপনা একটি বিষয় হিসাবে স্বীকৃতির সাথে সাথে পেশাগত ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব বেড়ে গেছে। গৃহ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র শুধু গৃহাঙ্গনই নয়, গৃহের বাইরে সমাজে এর ক্ষেত্র বিস্তৃত। আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে ‘গৃহ’ অন্যতম। গৃহে আমরা পরিবারের সবাই একসাথে বসবাস করি এবং সুখ শান্তির জন্য নানা ধরনের কাজ করি। এসব কাজ করার জন্য অর্থাৎ গৃহ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় নগদ অর্থ, জায়গা-জমি, জ্ঞান-বুদ্ধি, সময়, শক্তি ইত্যাদি সম্পদের। এই সম্পদগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে পরিবারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনার। গৃহকে একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনা করা হলে গৃহকর্তা হলেন গৃহ ব্যবস্থাপক। ব্যবস্থাপকের তত্ত্বাবধানেই এ প্রতিষ্ঠান তথা গৃহ পরিচালিত হয়, লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। গৃহের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হয়। পরিবারের একটি লক্ষ্য অর্জিত হলে আরেকটি এসে হাজির হয়। গৃহ ব্যবস্থাপনায় মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। মুল্যবোধ লক্ষ্যের ভিত্তি আর মান ব্যক্তির নিজস্বতা ও সমাজের দাবী থেকে সৃষ্ট পরিবার শুধু গৃহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় তার আদান-প্রদানের বিচরণ চারপাশের মধ্যেও রয়েছে। পরিবার তার মূল্যবোধ নিয়ে দূরের ও কাছের পরিবেশের মধ্যে বাস করে। ফলে পরিবেশের যে কোন পরিবর্তন পরিবারের উপর প্রভাব বিস্তার করে। গৃহ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা এই পরিবর্তনের মোকাবেলা করতে জ্ঞান দান করে। এককথায় বলা যায়, গৃহকে সুন্দর, মনোরম, আরামদায়ক ও শান্তিপূর্ণ করার উপায় হচ্ছে গৃহ ব্যবস্থাপনা।

* প্রত্যেক মানুষের নিরাপদ আরামদায়ক এবং মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল হল গৃহ। তবে এটি শুধু আশ্রয়স্থলই নয় বরং খাদ্য, শিক্ষা, পোশাক এবং বেঁচে থাকার জন্য অন্য সব চাহিদা সীমিত পরিসরে সঠিকভাবে পূর্ণ করার স্থানও বলা হয়।

* প্রতিটি গৃহে বিভিন্ন বয়সের সদস্য নিয়ে সবাই একসঙ্গে বসবাস করে। সেখানে এক এক সদস্য তাদের বয়স অনুযায়ী সময়, শক্তি, ধর্ম, বুদ্ধি ইত্যাদি সব কিছু কাজে লাগিয়ে গৃহকে একটি শান্তির স্থান তৈরি করতে চেষ্টা করে।

* সব গৃহে লোকসংখ্যা কম বা বেশি যে ধরনেরই হোক গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে।

* মনে রাখতে হবে গৃহ যে ধরনেরই হোক না কেন কিন্তু সব ঘরেই বিভিন্ন জিনিসপত্র কোথায়, কীভাবে রাখা হবে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রত্যেক সদস্যদের কীভাবে সমন্বয়ের মাধ্যমে একত্রে ব্যবহার করা যাবে- সব কিছুই গৃহ ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে।

* একমাত্র গৃহ ব্যবস্থাপনা আমাদের জীবনে সুন্দর, মনোরম, আরামদায়ক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে জীবনযাপনের পথ দেখাতে পারে।

গৃহ ব্যবস্থাপনার কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদান করা হল–

গৃহ ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে গার্হস্থ্য অর্থনীতিবিদ গ্রস, ক্রান্ডল ও নল, ডেকন, ফায়ারবাঘ এবং সোয়ান তাদের ভাষায় বলেছেন, ‘তুমি যা চাও তা লাভ করার জন্য তোমার যা কিছু আছে তা সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করাকে গৃহ ব্যবস্থাপনা বলা হয়।’

এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নিকেল এবং ডরসি বলেন, যে পারিবারিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য মানবিক ও পার্থিব সম্পদের ব্যবহার সঠিক করার জন্য পরিকল্পনা প্রদান করা, নির্দেশ করা, পথপ্রদর্শন, সমন্বয় সাধন ও মূল্যায়ন এবং গৃহ ও গৃহের বাইরে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দলীয় সম্পর্ক সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে এক কথায় গৃহ ব্যবস্থাপনা বলে।

অর্থনীতিবিদ রাইস-এর ধারণা কাঠামো থেকে গৃহ ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দেয়া হল।

গৃহব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগুলো উল্লেখ করা হল–

১. সম্পদের যথাযথ ও সুষ্ঠু ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে মানবীয় ও বস্তুবাচক সম্পদ ব্যবহারের পারদর্শিতা অর্জন।

২. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে লক্ষ্যস্থির করা ও বিশ্লেষণ করা।

৩. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে গৃহ ও গৃহের বাইরে একটি সুষ্ঠু বাস উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা।

৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, সাম্প্রদায়িক, ব্যক্তিগত, পরিবারিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারে বিবেচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ও তা কার্যকরী করতে সাহায্য করা।

৫. বিজ্ঞান ও কলার আবিষ্কৃত তথ্যকে জীবনে প্রয়োগের একমাত্র সাহায়ক গৃহ ব্যবস্থাপনার শিক্ষা।

৬. গৃহ, পরিবার তথা সমাজের নানাবিধ সমস্যার স্বরূপ উদ্ঘাটন করার জন্য গবেষণামূলক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করা এবং গবেষণার ফলাফল শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকর করা।

৭. ভোক্তা, উৎপাদনকারী ও বণ্টনকারীর মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করা।

৮. ভোক্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ হওয়া।

৯. দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার স্বরূপ উদ্ঘাটন ও সমস্যা সমাধানের জন্য সচেষ্ট হওয়া।

১০. আর্থিক সচ্ছলতা লাভের জন্য দূরদর্শী উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা।

১১. উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করা।

১২. পেশাগত ক্ষেত্রে যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করা।

১৩. পারিবারিক ক্রমবিকাশে সহায়তা করা।

১৪. আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গৃহস্থালির আধুনিক সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্রের সঙ্গে পরিচিত হয়ে এগুলোর যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণে পারদর্শিতা অর্জন করা।

১৫. কর্মজীবী মহিলাদের গৃহ ও চাকরি উভয় ক্ষেত্রের অসুবিধাগুলো দূর করে সুষ্ঠু পারিবারিক জীবনযাপনে সাহায্য করা।

* সব শেষে বলা যায়, গৃহ ব্যবস্থাপনা শুধু গৃহেই সীমাবদ্ধ নয়, গৃহের বাইরের সমাজে ও পরিবেশে এর কর্মক্ষেত্র ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। এ পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে পরিবর্তন আনা বা পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে খাপ খাওয়ানোর শিক্ষা গৃহ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিহিত রয়েছে। গৃহ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য এর বিষয়বস্তুর মধ্যে নিহিত।

প্রেষণা হচ্ছে কর্মসংক্রান্ত মনোবল যা ব্যক্তিকে কোনো কাজে উদ্বুদ্ধ করে। যেকোনো কাজের কারণ বা ব্যক্তিগত আচরণে ‘যা’ প্রভাব সৃষ্টি করে তাকে প্রেষণা বলে। এটি এমন একটা শক্তি যা কোন ব্যক্তিকে কোনো বিশেষ কাজের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ব্যক্তিকে পারিবারিক জীবনযাত্রার বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে ছোট বড় নানা ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। গৃহ এবং গৃহের বাইরে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু নির্দেশক রয়েছে। এই নির্দেশকগুলো ব্যক্তিকে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে এবং লক্ষ্য অর্জনের দিকে ধাবিত করে। এই নির্দেশকগুলো হল মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মান। গৃহ ব্যবস্থাপনায় এই নির্দেশকগুলোকেই প্রেষণা সৃষ্টিকারী ধারণা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

কোন জিনিসের দাম বা গুণকে মূল্য বলে। আর বোধ বলতে এখানে প্রবণতাকে বুঝায়। সুতরাং ব্যক্তির বা পরিবারের মূল্যবোধ হল তার নিকট যেসব বিষয় কাঙ্খিত ও প্রিয় এবং সেসব বিষয় ব্যক্তির আগের আচরণ ও কার্যাবলিকে প্রভাবিত কওে সন্তুষ্টি বিধান করে। মূল্যবোধ মানুষের একটি আত্মিক সম্পদ, মানুষের ইচ্ছার মানদন্ড। এটি কোনো বস্তু বা পরিস্থিতির মূল্য সম্বন্ধে ব্যক্তির অনুভূতি বা কোনো উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়।
মূল্যবোধ

মানুষ যা হতে চায়, যা অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করে, যার প্রতি গভীর আগ্রহ, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস আছে এবং যা সম্পাদন করে আনন্দ অনুভব করে তাই মূল্যবোধ।

মূল্যবোধ হল সুনিয়ন্ত্রিত, অর্থপূর্ণ ও মনের অনুভূতিপূর্ণ একধরনের মতবাদ ও বিশ্বাস যা মানুষের জীবনের রীতিনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তির আচরণে মূল্যবোধ একটি চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে। মানুষের কার্যকলাপে মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটে। তার বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত হয়। গবেষক নিকেল ও ডরসী (Nikel and Dorsey) মনে করেন যে, আমরা যখন সমস্যার সমাধান খুঁজি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখন বিভিন্ন বিকল্প পন্থার মধ্যে বাছাই করার শক্তিরূপে মূল্যবোধই সাহায্য করে।

গবেষক (Kluckelon) এর মতে মনোভাব, প্রেষণা সামগ্রী, পরিমাপযোগ্য প্রচলিত রীতি, প্রথা অথবা ব্যক্তি, দল, বিষয় ও ঘটনার সম্পর্ককে মূল্যবোধ বলে।

মূল্যবোধ জীবনের আদর্শনীতির সংগঠন অথবা প্রচলিত মান যা আচরণকে নিয়ম মাফিকভাবে প্রভাবিত করে। Kluckelon পরবর্তীকালে মূল্যবোধের সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে “মূল্যবোধ অর্থ প্রার্থনীয় বিষয় সম্বন্ধে ব্যক্তি বা দলের বহির্মুর্খ ও অন্তর্মুখ ধারণা যা তাদের কাজের ধরন, মাধ্যম ও পরিসমাপ্তিকে প্রভাবিত করে এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।”
মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য

মূল্যবোধের সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে কোন মতানৈক্য নাই। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

ক. মূল্যবোধ একটি প্রার্থনীয় বা আকাঙ্খিত বিষয় যা মানুষের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. মুল্যবোধের গভীরতায় ব্যক্তি বিশেষে পার্থক্য দৃশ্যমান

গ. মুল্যবোধের শিক্ষা ধীর গতিতে এবং প্রায় স্থায়ীভাবে সংঘটিত হয়।

ঘ. আত্মসৃজনশীলতার মাঝে মূল্যবোধ পরিস্ফুট হয়।

ঙ. এক ধরনের মূল্যবোধ অন্যের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও নিজস্ব মূল্যবোধ ব্যক্তির নিকট উত্তম।

চ. মূল্যবোধ স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা রাখে

ছ. মূল্যবোধ বিষয়ভিত্তিক বা আচরণভিত্তিক হতে পারে

জ. মূল্যবোধ তৃপ্তিদায়ক ও বাঞ্ছনীয়।

ঝ. মূল্যবোধের স্থায়িত্ব আপেক্ষিক এবং পরিবর্তন সাপেক্ষ

ঞ. এটি মানুষের আত্মিক সম্পদ এবং ইচ্ছার মানদন্ড

ট. মূল্যবোধ কিছুটা জন্মগত কিছুটা শিক্ষণীয় ।
মূল্যবোধের প্রকারভেদ

কতগুলো সাধারণ মূল্যবোধ আছে যা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষক পার্কার (Parker) এগুলোকে প্রেরণাদানকারী মৌলিক মূল্যবোধ নামে অভিহিত করেছেন। এগুলো হল –

আরাম (Comfort) : জীবন আনন্দময় করে গড়ে তোলা।

স্বাস্থ্য (Health) : শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা ।

উচ্চাকাঙ্খা (Ambition) : ব্যক্তিগত জীবনে সফলতা লাভের আশা এবং সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণে আগ্রহ ও তা পালন করা।

ভালবাসা (Love) : পরিবার ও পরিবারের বাইরের জগতে সকলের সাথে সদ্ভাব ও ভালবাসার সম্পর্ক রাখা।

জ্ঞান (Knowledge) : সত্যকে জানার আগ্রহ এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্যের মধ্যে তৃপ্তি লাভ করা ।

কৌশলী তৃপ্তি (Technological Stisfaction) : কোন কিছু অর্জনের উপায়গুলো দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করা

খেলা (Play) : কথায়, কাজে ও বাস্তবে উৎসাহী ও সৃজনশীল মনোভাব পোষণ করা।

শিল্প (Art) : অনুভূতি প্রকাশে সৌন্দর্য, কাজের সৌন্দর্য, যেমন- পেইন্টিং, গান বাজনা, লেখাপড়া, পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদিতে।

ধর্ম (Religion) : জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে প্রত্যেকটি কাজকর্মকে সঠিকভাবে এবং সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করা এবং তা থেকে তৃপ্তি পাওয়ার জন্য স্ব-স্ব ধর্মীয় পাদপীঠে গমন করা।

মূল্যবোধের বিকাশ একটি পরিবারের মূল্যবোধ তার বসবাসকারী সমাজ, সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বিকাশ লাভ করে। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় মূল্যবোধ কিছুটা শিক্ষনীয় কিছুটা জন্মগত। মূল্যবোধের বিকাশ শিশুকাল থেকেই শুরু হয়। সারাজীবন ব্যাপি মানুষ অভিজ্ঞতার আলোকে মূল্যবোধ অর্জন করে, মূল্যবোধকে জোরদার ও দৃঢ় করে তোলে। সামাজিক পরিবর্তন, প্রযুক্তির প্রভাব, অবস্থানের পরিবর্তন, আর্থিক অবস্থার হ্রাস-বৃদ্ধি ইত্যাদির প্রভাবে মূল্যবোধ পরিবর্তিত ও সংশোধিত হয় এবং পরিণত মূল্যবোধ তৈরি হয়। লিওনার্দ মেও (Leonard Mayo) বলেন যে, পরিবার শুধু মূল্যবোধ অর্জনেই সাহায্য করেনা এটা মূল্যবোধ তৈরিও করে। মূল্যবোধের বিকাশ কোন বয়সে থেমে যায় না। মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানুষ সারাজীবন অভিজ্ঞতার আলোকে মূল্যবোধকে যাচাই করে তা আরো সুন্দর ও পরিমার্জিত করে গড়ে তুলতে পারে।
গৃহ ব্যবস্থাপনায় মূল্যবোধের গুরুত্ব

মূল্যবোধ জীবনকে লক্ষাভিমুখী করে তোলে। কারণ মানুষের চেতন, অবচেতন সব কাজের বহি:প্রকাশ ঘটায় মূল্যবোধ। সুষ্ঠু গৃহ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পারিবারিক লক্ষ্য অর্জনের পথকে সুগম করে মূল্যবোধ। মূল্যবোধের গুরুত্বগুলো নিম্নরূপ

• গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ধাপ যথা- পরিকল্পনা, সংগঠন, নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়নের অন্তর্নিহিত শক্তিই হচ্ছে মূল্যবোধ।

মূল্যবোধ গৃহের প্রত্যেককে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। মানুষ যখন মূল্যবোধ সচেতন হয় তখন সে লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

মূল্যবোধ ইতিবাচক হলে পরিবারের অর্থ ব্যবস্থাপনাও সঠিকভাবে ঘটে। অপচয়, ঋণ গ্রহণ এবং বিলাসিতা না করে বরং পারিবারিক বাজেট করা, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করে পারিবারিক আয় বাড়ানোর বিষয়ে সচেতনতা বাড়ে।

সময় ও শক্তি সংরক্ষণ করা এবং সচেতনভাবে সময় ও শক্তির ব্যবহারকে মূল্যবোধ প্রভাবিত করে।

মূল্যবোধ সচেতন ব্যক্তি বা পরিবারই নিজেদের সামর্থ্য, রুচি এবং অবস্থান অনুযায়ী সঠিকভাবে স্থান নির্বাচন করে গৃহ পরিকল্পনা করতে পারে। পরিবেশের সাথে ভারসাম্য রেখে গৃহকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক করে তুলতে পারে।

• মুল্যবোধই ব্যক্তি ও পরিবারকে বাড়ির উপযোগিতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

মূল্যবোধ সচেতনতা পরিবার ও ব্যক্তির জীবনে বুদ্ধি বিবেচনা, বিচারশক্তি, দূরদর্শিতামূলক আচরণের বিকাশ ঘটায়। এভাবে ফলপ্রসু গৃহ ব্যবস্থাপনা গৃহ, সমাজ ও দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়।

গৃহব্যবস্থাপনায় লক্ষ্য হল পরিবারের সবার চাহিদা পূরণ করা, খাদ্য-বস্ত্র, আরাম, নিরাপত্তা, শিক্ষা,চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি মৌলিক বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধান করা। অর্থাৎ পরিবার যা চায় এবং যা করতে ও হতে ইচ্ছা করে তাই পরিবারের লক্ষ্য। সচেতন মূল্যবোধ থেকেই লক্ষ্য সৃষ্টি হয়। লক্ষ্য হল গৃহ ব্যবস্থাপনার পূর্বশর্ত। কারণ লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। G. R. Terry এর মতে লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটা কাম্য বা উদ্দেশ্য যার নির্দিষ্ট পরিধি আছে এবং যা একজন ব্যবস্থাপক তথা গৃহিণীর কার্যাবলিকে নির্দেশ দান করে। লক্ষ্য স্থির করা না হলে ব্যবস্থাপনা সফল হতে পারে না।

প্রত্যেক ব্যক্তি তথা পরিবারের মধ্যে ছোট বড় অনেক লক্ষ্য থাকে যা অর্জন করার জন্য তাদের কার্যাবলি নির্দিষ্ট পথে চলতে থাকে। কারণ লক্ষ্য অর্জন স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় না। লক্ষ্য অর্জন করতে কিছু কার্য সম্পাদন করতে হয়। এসব কাজের সমষ্টিই হল ব্যবস্থাপনা। গৃহের লক্ষ্যই যদি ঠিক না থাকে তাহলে গৃহব্যবস্থাপনাও এলোমেলো ও অর্থহীন হয়ে পড়বে। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার যদি না জানে সে কী চায় তবে তার জীবনটাই বৈঠাবিহীন অর্থাৎ চালকহীন নৌকার মত দুলতে থাকে। এখানে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যকে নৌকার চালিকা শক্তি বৈঠার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্য

লক্ষ্য বলতে বুঝায় ভবিষ্যতের আকাঙ্খিত ঘটনা বা পরিস্থিতি। তবে সব আকাঙ্খিত পরিস্থিতি বা ঘটনা লক্ষ্য নয়।

লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট মূল্য ও নির্দিষ্ট আঙ্গিকে হতে হবে।

লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সচেতনভাবে ধারণ করতে হবে।

লক্ষ্য, মূল্যবোধ, বুদ্ধি থেকে সৃষ্ট ।

লক্ষ্য সুব্যক্ত ও সহজে বোধগম্য এবং ব্যাখ্যাও করা যায়।

লক্ষ্য ব্যক্তিগত জ্ঞান, দক্ষতা ও কর্ম আচরণকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে

• গৃহের সফলতা বা ব্যর্থতা লক্ষ্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

লক্ষ্যই ব্যবস্থাপনার দিক নির্দেশক। লক্ষ্য থাকলেই ব্যবস্থাপনার প্রশ্ন আসে নতুবা নয়।
লক্ষ্যের প্রকারভেদ

গবেষক নিকেল এবং ডরসী লক্ষ্যকে সময়ের আঙ্গিকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। এ শ্রেণিবিভাগে সময়সীমাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যগুলো হল :

১. দীর্ঘমেয়াদী বা প্রধান লক্ষ্য / দূরবর্তী লক্ষ্য

২. মধ্যবর্তী বা স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য

৩. তাৎক্ষণিক বা সহকারী লক্ষ্য / নিকটবর্তী লক্ষ্য

১. দূরবর্তী বা প্রধান লক্ষ্য (Long term aim) : এ ধরনের লক্ষ্য স্থায়ী এবং সময় সাপেক্ষ। এ লক্ষ্য সব সময় সচেতন মনে বিরাজমান থাকে এবং মধ্যবর্তী বা স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মধ্যবর্তী লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে চূড়ান্ত বা প্রধান লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। প্রধান লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে সফলতা প্রমাণিত হয়।

২. মধ্যবর্তী বা স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য (Intermediate aim) : পরিবারকে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রায়ই স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। যেমন- পরিবারের একটি মেয়ে বা ছেলের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হল উচ্চশিক্ষা লাভ করা। এই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য পরিবারটির মধ্যবর্তী লক্ষ্য হবে ভাল ফলাফল নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা। স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের চেয়ে নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট। এর জন্য অনেক বিকল্প থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় অবস্থা ও পরিস্থিতির কারণেও স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য স্থির করতে হয়।

৩. নিকটবর্তী বা তাৎক্ষণিক লক্ষ্য (Short term aim) : ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে নিকটতম উদ্দেশ্যকে তাৎক্ষণিক লক্ষ্য বলে। অর্থাৎ লক্ষ্য নির্ধারণের সাথে সাথেই অর্জন করা যায়। যেমন : গৃহিণী কোন পারিবারিক উৎসব উপলক্ষ্যে গৃহের পরিবেশ সুন্দর করে তুলতে চাইলেন। তার এই তাৎক্ষণিক লক্ষ্য পূরণের জন্য যখন তিনি ঘর ঝাড়মোছা করেন, আসবাবপত্রগুলো সুন্দরভাবে বিন্যাস করেন, তাজা ফুল সংগ্রহ করেন ইত্যাদি তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য পূরণ করলেন।
বিভিন্ন প্রকার লক্ষ্যের সম্পর্ক

সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যের সমন্বয় সাধন পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য থাকতে পারে। তবে এগুলো পরিবারের সামগ্রিক উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পরিবারের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে আন্ত:সম্পর্ক ও মিল না থাকলে পরিবারের দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্যপূরণ বাঁধাপ্রাপ্ত হবে।

সবধরনের লক্ষ্যের মধ্যে সঙ্গতি বিধান পরিবারের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের সাথে মধ্যবর্তী ও তাৎক্ষণিক লক্ষ্যের একটা : নিবিড় সম্পর্ক আছে। বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে সংগতি বা মিল না থাকলে প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অন্যভাবে বলা যায় যে স্বল্প মেয়াদী ও তাৎক্ষণিক লক্ষ্য অর্জনের চূড়ান্ত রূপ হল দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য।

• বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্যের নমনীয়তা : বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলে লক্ষ্য বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। একটি লক্ষ্য থেকে অন্য একটি লক্ষ্যের উৎপত্তি হয়, এবং এরা পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত ও নির্ভরশীল হয়। একটি লক্ষ্য অন্য একটি লক্ষ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে। আবার একটি লক্ষ্য অর্জনের উপর অন্য একটি লক্ষ্যের বাস্তবায়ন নির্ভর করে। কাজেই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প মেয়াদী ও তাৎক্ষণিক লক্ষ্যের পরিবর্তন ও পরিমার্জনের সুযোগ থাকতে হবে। একটি লক্ষ্য যেন অন্য লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়ে যেন আপোষমূলক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। যেমন- ছেলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করা একটি পরিবারের প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে ছেলেমেয়েদের ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো, শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং পরিবারের মূল্যবোধকে সামনে রেখে নিয়মিত পড়াশুনা করে ভাল ফলাফল করা। এখানে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি লক্ষ্যই পরস্পর নির্ভরশীল এবং নমনীয়। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিটি লক্ষ্যের প্রচেষ্টা ও কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
লক্ষ্যের পরিবর্তনশীলতা

আর্থ-সামাজিক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দৃষ্টিভঙ্গী ও মনোভাবের পরিবর্তনের কারণে লক্ষ্যের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন –

• পারিবারিক জীবনচক্র ক্রমে ক্রমে লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

পরিবারের সদস্যদের মনোভাব, আগ্রহ কিংবা সুযোগ অনেক সময় নতুন লক্ষ্যের সৃষ্টি করে।

লক্ষ্য স্থির করার পর যদি তা কষ্টসাধ্য এবং সঠিক মনে না হয় তা হলে লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটে। পারিবারিক বিপর্যয়, যেমন মৃত্যু, দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, বেকারত্ব, চাকুরিচ্যূতি ইত্যাদি কারণে লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটে।

স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের চরম ব্যর্থতা ঘটলে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে পরিবর্তন ঘটে। কোনো কারণে জীবনযাত্রা প্রণালীতে ব্যতিক্রম ঘটলে তা লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটায়।
লক্ষ্য বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত

সাফল্যের সাথে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য কতগুলো বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। লক্ষ্য সর্বদা বাস্তবমুখী হতে হবে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে যা বাস্তবে রূপদান করা সম্ভব। যেমন

লক্ষ্য নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট হতে হবে। উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট না হলে তা অর্জনে অনাকাঙ্খিত বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে।

লক্ষ্য এবং তা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। সম্পদ অর্থাৎ টাকা পয়সা ইত্যাদি অর্থনৈতিক সম্পদ লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার স্বরূপ।

উদ্দেশ্য নির্ধারণকারী এবং বাস্তবায়নকারীদের মধ্যে সুসমন্বয়, সুষ্ঠু আদান-প্রদান ও সুসম্পর্ক থাকতে হবে।

অবস্থা ও পরিস্থিতি বিশেষে যাতে লক্ষ্য পরিবর্তনের সুযোগ থাকে সেজন্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নমনীয় হতে হবে।
মান

‘মান’ যে কোনো বিষয়ের পরিমাণ এবং গুণগত দিক নির্ধারণ করে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য যা প্রয়োজন ও মূল্যবান বলে বিবেচিত হবে তাই মান। এটি আমাদের কোনো কিছুতে আগ্রহ ও তৃপ্তির পরিমাণ ও ধরন নির্ধারণ করে। অন্য কথায় মান পরিবার এবং ব্যক্তির সামর্থ্যকে নির্দেশ দেয় এবং ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করে। মানুষের কাজকর্মে চলাফেরায় তার মান প্রকাশ পায়। গবেষক Maloch ও Deacon এর মতে, জীবনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ ব্যবহারের গুণাগুণ ও পরিমাণের পরিমাপকে মান বলে। অর্থাৎ ‘মান’ হল মূল্যবোধ ও লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টার মানদন্ড। মান অর্জিত হলে আমরা পরিতৃপ্ত হই, অর্জিত না হলে আমাদের মধ্যে অতৃপ্তি থেকে যায়। জীবনযাপনের মান নির্ভর করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবাকর্মের ভোগের ওপর। ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা বা প্রয়োজন, আরাম ও নিরাপত্তা, বিনোদন কীভাবে পূরণ হচ্ছে তার পর্যাপ্ততার ওপর জীবনযাপনের মান নির্ভর করে। পারিবারিক জীবনযাপনের মান শুধু বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবা কর্মের পরিমাণ ও গুণকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে না, সেই দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্মের ব্যবহার পদ্ধতি এবং কী মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা হচ্ছে তাও জীবনযাপনের মানের অন্তর্ভুক্ত।
মানের শ্রেণিবিভাগ

মূল্যবোধের ভিত্তিতে মানকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা

১। প্রচলিত মান : সামাজিক বিধিনিষেধ ও নিয়ম কানুনকে ভিত্তি করে এই মান সৃষ্টি হয়। এই মান সহজে পরিবর্তিত হয় না। যেমন – আমাদের দেশের মেয়েদের প্রধান পোশাক শাড়ি।

২। নমনীয় মান : পরিস্থিতি এবং অবস্থা অনুযায়ী যে মান নির্ধারিত হয়, সেটা নমনীয় মান। নমনীয় মান মানুষকে স্বাধীনভাবে চলার এবং পছন্দ করার সুযোগ দান করে যেমন – পেশা নির্বাচনের সুযোগ; পছন্দমত খাদ্য খাওয়া ইত্যাদি।

জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি করে মানকে দুভাগে ভাগ করা যায়

১। পরিমানগত মান : পরিমাণগত মান সাধারণত কোন কিছুর ওজন, ঘনত্ব, পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পরিমাণগত মান, যেমন- কেজি, কিলোমিটার, মিটার, লিটার ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

২। গুণগত মান : গুণগতমান বস্তুর গুণ বা বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা হয়। একজন ব্যক্তি কী ধরনের গুণগত মানসম্পন্ন দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাক্রয় ভোগ করবে তা নির্ভর করে ঐ ব্যক্তির রুচি, পছন্দ, অর্থনৈতিক অবস্থা বা মূল্যবোধের ওপর।
মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মানের আন্তসম্পর্ক

মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মান পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। গৃহব্যবস্থাপনায় মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মান এ নির্দেশকগুলো প্রেষণা সৃষ্টিকারী উপাদান হিসাবে পরিচিত। মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে মূল্যবোধ প্রকাশ পায়। এই সব কার্যকলাপের পরিণতি হল লক্ষ্য। মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে যে লক্ষ্য নির্ধারিত হয় তা অর্জনের জন্য নানা ধরনের বস্তুবাচক, মানবীয় কিংবা সাম্প্রদায়িক সুযোগ সুবিধাগত সম্পদের ব্যবহার হয়। আর জীবনের এ লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনে সম্পদ ব্যবহারের গুণাগুণ ও পরিমাণের পরিমাপকে মান বলে।
মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মানের পারস্পারিক সম্পর্ক

১। প্রতিটি পরিবারই অনবরত মূল্যবোধ যাচাই এবং সংরক্ষণের চেষ্টা করে। পরিবারের চাহিদা লক্ষ্যকে প্রভাবিত করে এবং পরিবর্তন করে। পরিবারের ক্রমাগত ক্রিয়ালাপের সমাপ্তিতে লক্ষ্য প্রকাশ পায়। এভাবে মূল্যবোধ থেকে লক্ষ্যের উৎপত্তি হয়। লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে মূল্যবোধ বাস্তবরূপ লাভ করে ।

২। মূল্যবোধ লক্ষ্য নির্ধারণের মানদন্ড । কেননা যে লক্ষ্য অর্জনে মানুষ সন্তুষ্টি লাভ করে তাই মূল্যবোধরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩। মূল্যবোধ থেকে উৎপন্ন হয়ে লক্ষ্য মাধ্যম খুঁজে সফলতা লাভের জন্য। লক্ষ্য অর্জনের পথ পরিক্রমায় এ মাধ্যমই ‘মান’ হিসাবে কাজ করে৷

৪। মানের উপর নির্ভর করে লক্ষ্য বড় হবে না ছোট হবে। লক্ষ্য অর্জনে মানের প্রভাব রয়েছে। জীবনযাপনের মানের উপর লক্ষ্যের প্রভাব আছে।

৫। মূল্যবোধ সচেতন হয়ে লক্ষ্য স্থির করতে হয়। আর সম্পদ ব্যবহারের গুণগত ও পরিমাণগত যথার্থতা অর্থাৎ মানই নির্ধারণ করে কৃতকার্যতা বা লক্ষ্য অর্জনের সফলতা।

মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও মানের আন্ত:সম্পর্ক একটি উদাহরনের মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে, যেমন পরিবার যদি ‘জ্ঞান’ অর্জনের মূল্যবোধ লালন করে তাহলে তার লক্ষ্য হয়ে উঠে ‘উচ্চশিক্ষা গ্রহণ। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিবার সম্ভাব্য সদস্যদের জ্ঞান অর্জনের জন্য নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠায়, বইপত্র সরবরাহ করে, প্রয়োজনে গৃহ শিক্ষকের ব্যবস্থা করে। এভাবে পারিবারিক মূল্যবোধের (জ্ঞান) মাধ্যমে সৃষ্ট সন্তানদের লক্ষ্য (উচ্চশিক্ষা) অর্জনের জন্য বিভিন্ন সম্পদ (বিদ্যালয়ের খরচ, বই-পত্র ক্রয়, গৃহ শিক্ষকের বেতন ইত্যাদি) ব্যবহার করে। অর্থাৎ লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টাই সম্পদ ব্যবহারের ‘মান’ নির্ধারণ করে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পদের ব্যবহারের ‘মান’ যত সমৃদ্ধ ও পর্যাপ্ত হয় লক্ষ্য অর্জন তত সহজ ও সাফল্যমন্ডিত হয়ে ওঠে।

মূল্যবোধ দৃশ্যমান নয় কিন্তু লক্ষ্য সুষ্পষ্ট। ‘মান’ হল লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম বা পরিমাপক। সুতরাং এদের পারস্পারিক ও সম্মিলিত সম্পর্কের বাস্তব রূপকল্পই হল সফলতা বা লক্ষ্য অর্জন গবেষক Gross বলেছেন, মূল্যবোধ ব্যবস্থাপনায় প্রেষণা যোগায়, লক্ষ্য দিক নির্দেশনা দেয় এবং মান ফলাফল প্রকাশ করে।

এইচএসসি গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন ৩য় সপ্তাহ এসাইনমেন্ট ২য় পত্র  ২০২১

Assaintment-page-011
See More: HSC Geography Assignment Answer 2021

HSC Home Management And Family Life 3rd Week Assignment Answer 2021

এইচএসসি গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন ১ম পত্র এসাইনমেন্ট ২০২১

Related Post: HSC History Assignment Answer

HSC-Home-Management-And-Family-Life-Assignment-Answer-2021

এইচএসসি সিলেবাস এ্যাসাইমেন্ট ২০২১ ও ২০২২। এইচএসসি গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন এসাইনমেন্ট ২০২১ সমাধান, গৃহ ব্যবস্থাপনা এ্যাসাইমেন্ট উত্তর দেখুন।

HSC Arabic Assignment Answer 2021

এ্যাসাইমেন্ট: আর্থ সামাজিক পরিবর্তনে পারিবারিক জীবনে গৃহ ব্যবস্থাপনা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ।

শিক্ষনফল/বিষয়বস্তুঃ

• গৃহ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট মনীষী প্রদত্ত ধারণা কাঠামাে সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারবে

• গৃহ ব্যবস্থাপনার বিষয়বস্তু ও পরিধি বর্ণনা করতে পারবে

• গৃহ ব্যবস্থাপকের গুণাবলী মূল্যায়ন করতে পারবে।

• আর্থ সামাজিক পরিবর্তনের ব্যবস্থাপনার প্রযােজনীয়তা বিশ্লেষণ করতে পারবে

নির্দেশনাঃ •

• গৃহ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট মনীষী প্রদত্ত ধারণা কাঠামাে দেখাও

• গৃহ ব্যবস্থাপনার বিষয়বস্তু ও পরিধি বর্ণনা।

• গৃহ ব্যবস্থাপকের গুণাবলী মূল্যায়ন করাে

• আর্থ সামাজিক পরিবর্তনে গৃহ ব্যবস্থাপনার প্রযােজনীয়তা বিশ্লেষণ করাে

• পাঠ্যপুস্তক অন্যান্য গ্রন্থ শ্রেণী শিক্ষক অভিভাবক এর সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে

• ইন্টারনেট ওযেবসাইট এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে

HSC Home Management And Family Life 1st Paper Assignment Answer 2021

Recommend For You: HSC Social Work Assignment Answer 2021

HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-1
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-2
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-3

HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-4
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-5
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-6
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-7
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-8
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-9
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-10
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-11

HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-12
HSC-Greho-Babosthapona-O-Paribarik-Jibon-Assignment-13

How to Get Good Marks HSC Greho Babosthapona O Paribarik Jibon 2nd & 3rd Week Assignment 2021 Answer

Last Thoughts

Leave a Reply