জমির নামজারি করার সঠিক নিয়ম 2024 – খারিজ/মিউটেশন/নামজারি ফিস ও আবেদনপত্রের সাথে কাগজপত্র

জমির নামজারি করার সঠিক নিয়ম ২০২৩। জমির আইনি মালিক ও জমির মালিক কে চিহ্নিত করার নাম হলো নামজারি। কিভাবে নামজারি করবেন, অনলাইনে নামজারি করার পদ্ধতি, সঠিক সময়ে লিগ্যালি নামজারি করার নিয়ম, নামজারি করার ফি,  জমির নাম জারি দেখার নিয়ম, জমির ওয়ারিশ, নামজারি বিষয়ে সমস্ত কিছু আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়। জমি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা এড়াতে জমির নামজারি করা একান্ত আবশ্যক। তাই আপনি যদি আপনার জমির মালিকানা ও নামজারির সম্পর্কিত কোন ধারনার প্রয়োজন হয় তবে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।

আইনিভাবে এবং বৈধ উপায়ে আপনি আপনার জমির নাম জারি করতে হলে ও জমির হালনাগাদ করতে হলে অবশ্যই নামজারি সম্পর্কে জানা আবশ্যক। কিভাবে সহজেই আপনি জমির নামজারি করে নিতে পারবেন তা জানতে হলে আমাদের পোস্টটি পড়তে পারেন। নামজারি বিষয়ে সমস্ত কিছু আজকে আমরা আপনাদের জানাতে চলেছি। জমি সম্পর্কিত জটিলতা ও নামজারি সহজে করতে হলে মনোযোগ সহকারে এটি পড়তে পারেন।
 

নামজারি কি, কেন করবেন নামজারি?

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র: নামজারি আবেদন নামঞ্জুরের আগে কারণ জানাতে হবে  সেবাগ্রহীতাকে | প্রথম আলো

 
নামজারি করার সঠিক নিয়ম জানতে হলে আমাদের অবশ্যই আগে নামজারি সম্পর্কে জানতে হবে। নামজারি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে নামজারি করার নিয়ম সহজ হয়ে যাবে। আপনি যদি না জেনে থাকেন যে জমির নামজারি কি বা কিভাবে এটি করতে হয় তবে জেনে নিন।
জমির নামজারি হলো জমির নতুন মালিকের নামে বৈধ ও আইনি খতিয়ান তৈরি করা। নামজারি কে ইংরেজিতে মিউটেশন বলে। অর্থাৎ কোন জমির বর্তমান খতিয়ানে যে মালিকের নাম রয়েছে সেই মালিকের নাম পরিবর্তন করে নতুন মালিকের নাম সংযোজন করা। অর্থাৎ জমির মালিকানা পরিবর্তন করা। নতুন মালিকের নামে জমির খতিয়ান তৈরি করা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধরুন আপনার বাড়ির বসতভিটে আপনার বাবার নামে আছে। সেখান থেকে আপনি যদি আপনার নামে জমিটা ট্রান্সফার করতে চান তবে অবশ্যই আপনার নামে জমির নামজারি করতে হবে।  অর্থাৎ আপনার নামে জমির মালিকানা নতুন করে হবে। যাকে বলা হচ্ছে জমির নামজারি বা মিউটেশন। আবার আপনি কোথাও থেকে নতুন ভাবে জমি ক্রয় করলেন। সেখানে বর্তমান মালিকের নাম বা খতিয়ান বাদ দিয়ে আপনার নামে নতুন খতিয়ান তৈরি করা হবে। আপনি হবেন লিগালি ওই জমির মালিক। যাকে বলা হচ্ছে নামজারি বা মিউটেশন। যেকোনো জমির মালিকানা চিহ্নিত করতে এবং জমির অধিকার ভোগ করতে নামজারীর আবশ্যক।
 

 ই-নামজারি / মিউটেশন আবেদন ফর্ম 

 
নামজারির আবেদন করার জন্য নামজারি আবেদন ফর্ম রয়েছে। যা আপনি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস বা অনলাইন থেকেও এই আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। যেখানে আপনার জমি সংক্রান্ত বিষয়বলি ও আপনার সম্পর্কিত তথ্যাবলী ফর্মে কলম দ্বারা পূরণ করতে হবে। ফর্মের সাথে অবশ্যই যা যা থাকতে হবে:
১. আপনি যে জমি ক্রয় করেছেন বা যেই জমির মালিকানা পেতে চান সেই জমি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র ।
২.আবেদন ফরমের সাথে আপনার বাংলা বছরের হিসাব করে জমি খাজনার রশিদ দিতে হবে। 
৩.যদি আপনি অন্য কোন মালিকের কাছ থেকে জমি কিনে জমির মালিকানা করতে চান সেক্ষেত্রে দলিলের ফটোকপি দিতে হবে।
৪. ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা হলে ইসুকিত মূল ওয়ারিস সনদপত্র।
৫. জাতীয় পরিচয়
৬.জাতীয়তা সনদপত্র 
৭.পাসপোর্ট (যদি থাকে)
৮. ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফিস
৯.১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
 
নামজারি বা মিউটেশন করার ক্ষেত্রে পরোক্ত কাগজপত্র একসাথে পিন আপ করে আবেদনপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে জমা দিতে হবে।
 

নামজারি করার ক্ষেত্রসমূহ জমির নামজারি করার সঠিক নিয়ম 

 
জমির কোন কোন ক্ষেত্রে নাম জারি করা বাধ্যতামূলক বা জরুরি তা আপনার জানা আবশ্যক। আপনার জমির মালিকানা আপনাকে নিশ্চিত করতে অবশ্যই নামজারি করতে হবে। চলুন তবে জেনে নিই কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার নামজারি করতে হবে:
 

১. ওয়ারিশ নামজারি জমির নামজারি করার সঠিক নিয়ম 

 
জমির মালিকের মৃত্যুতে আইনগত ওয়ারিশ করতে হবে। সাধারণত পারিবারিক জমির মালিকানা পরিবর্তনে আমরা এই ধরনের নামজারি করা দেখতে পাই। ধরুন আপনার পিতার সম্পত্তি পিতার মৃত্যুর পর আপনার নামে পরিবর্তিত হবে। এই ধরনের নাম যা মালিকা না পরিবর্তনে খতিয়ান করাই হলো ওয়ারিশ নামজারি। আপনার পিতার মৃত্যুর পর বা পিতা থাকাকালীন পিতার সম্পত্তি আপনার নামে মালিকানা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ওয়ারিশ নামজারি করতে হবে।
 

২. মালিকের স্বত্ববিলোপে নামজারি

 
মালিকের স্বত্ববিলোপের ফলে মালিকানা সরকারের নিকট পরিবর্তিত হলে পরবর্তীতে নামজারি করতে হবে।
 

৩. নিলামে ক্রয়  জমির নামজারি করার সঠিক নিয়ম 

 
নিলামে কোন সম্পত্তি বা জায়গা জমি ক্রয় করা হলে পরবর্তীতে নতুন মালিকের নামে জমির নামজারি করতে হবে।
 

৪. সরকারি অধিগ্রহণে  জমির নামজারি করার সঠিক নিয়ম 

 
সরকারি প্রয়োজনে যদি কোন সম্পত্তি বা জমি গ্রহণ করতে হয় তবে সেই জমির নাম জারি করা জরুরি। এতে সরকারি সম্মতিতেই জমির নামজারি করা হয়।
 

৫. আদেশবলে মালিকানা পেলে

 
আদেশ বলে আপনি যদি কোন জমির মালিকানা পেয়ে থাকেন তবে সেই যমের নাম জারি করতে হবে। এতে নামজারি করতে নতুন করে খতিয়ান করিয়ে নিতে আবেদন করতে হবে নামজারি করার জন্য।
 

৬. বন্দোবস্ত জমি নামজারি

 
সরকারের নিকট থেকে কেউ যদি খাস জমি পেয়ে সেখানে বসবাস বা চাষাবাদের অনুমতি পেয়ে থাকে তবে সেই জমি নিজের নামে নামজারি করে নিতে হবে। এতে নামজারীর করার একই নিয়মে আবেদন ফ্রম পূরণ করে তা ভূমি অফিসের মাধ্যমে খতিয়ান করে মালিকানা করে নিতে হবে।
 

  অনলাইনে জমির নামজারি দেখার নিয়ম

 
 অনলাইনে আপনি খুব সহজে জমির নামজারি দেখে নিতে পারেন। অনলাইনে জমির নাম জারি যাচাই করতে আপনার শুধু কয়েকটি বিষয় জানতে হবে এবং সঠিকভাবে তা ক্লিক করতে হবে। চলুন জেনে নিয়ে অনলাইনে জমির নামজারি দেখার ও যাচাইয়ের নিয়ম।
 
১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনার বিভাগ সিলেক্ট করুন
২. এরপর আপনার জেলা সিলেক্ট করুন
৩. আপনার উপজেলা সিলেক্ট করুন
৪. এরপর মৌজা ঘরে ক্লিক করে আপনার উপজেলার যেসকল মৌজার খতিয়ানের চূড়ান্ত হয়েছে সেই সকল মৌজার ভেতর আপনার মৌজার সিলেক্ট করুন।
 
এখান থেকে আপনি আপনার জমির নামজারি সহ সমস্ত তথ্য দেখতে পাবেন। তবে অনলাইনে নোম জমির নাম জানি দেখতে হলে আপনার যে বিষয়গুলো দিয়ে তা দেখতে পারবেন তা হলো- খতিয়ান নাম্বার, অথবা দাগ নাম্বার জানতে হবে, কিংবা জমির মালিকের নাম জমি মালিকের পিতা বা স্বামীর নাম। এই বিষয়গুলোর যেকোনো একটি জানা থাকলেই সেই তথ্য দিয়ে আপনি আপনার জমির নামজারি যাচাই নিতে পারবেন।
 

   অনলাইনে নামজারি আবেদন  নিয়ম ও চেক/অনলাইনে জমির নামজারি করার নিয়ম

 
সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে বর্তমানে চালু হয়েছে ই নামজারি পদ্ধতি। যেখানে আপনি চাইলে খুব সহজে নামজারি করতে পারবেন। জমির নাম জারি নিয়ম আমাদের অনেকের কাছেই দুর্বোধ্য ও সময় সাপেক্ষ মনে হয়। তাই আপনি খুব সহজে অনলাইনের মাধ্যমে ও কিছু কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুব সহজে আপনার জমির নামজারি করে নিতে পারেন। অনলাইনে জমির নামজারি করতে হলে প্রথমে এই নামজারির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যাবতীয় তথ্যাবলী প্রদান করতে হবে। আবেদন ফরম পূরণের পর নামজারি বাবুদ ২০ টাকা ও কোর্ট ফি বাবুর ৫০ টাকা মোট 70 টাকা বিকাশ রকেট উপায় ইত্যাদি মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। এরপর সেখানে দেয়া ফোন নাম্বারে  জমি খারিজ নামার বার্তা পাঠানো হবে আপনার ফোনে।
 

mutation land gov bd 

 
অনলাইনে জমি হাইজের ক্ষেত্রে প্রথমে আপনার ই নামজারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এর জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে তা নিম্নরূপ:
 
১. https://mutation.land.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে জমির নামজারি আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
২. সঠিকভাবে যে তথ্যগুলো আপনার সম্পর্কে ও জমি সংক্রান্ত চাওয়া হবে তা দিতে হবে। 
৩. আপনার স্বাক্ষর থাকতে হবে।
৪. NID কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র
৫. জমি ক্রয় করার দলিল
৬. সর্বশেষ ক্রয়কৃত জমির খতিয়ান
৭. যদি প্রয়োজন হয় তবে ওয়ারিশ সনদপত্র
উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো স্ক্যান করে আবেদন ফর্ম এর সাথে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে সাবমিট করতে হবে।
 

  জমির নামজারি ফি

 
জমির নাম জারি ফি কত কিংবা জমির নামজারি করতে কত টাকা লাগে তা অনেকে অনেক রকম বলে থাকেন। তবে সঠিক ফি কত তা আপনার জমির নামজারি করতে সুবিধা হবে। আপনার আত্মীয় প্রতিবেশী বা পরিবারের লোককেও আপনি এ ব্যাপারে জানাতে পারবেন। জমির নাম যাই করতে কোন কোন ক্ষেত্রে মোট কত টাকা খরচ হয় তা নিয়ম তুলে ধরা হলো:
 
১. ভূমি অফিস থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতেন নিবে ১০ টাকা। আপনি এটি অনলাইন থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন আবার আপনার নিকটস্থ ফটোকপির দোকান থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন।
 
২. আবেদনপত্রের সাথে কোর্ট ফি২০ টাকা।
৩. নামজারির নোটিশ প্রেরণের জন্য ৫০৳ টাকা।
৪. রেকর্ড সংশোধন বা হালনাগাদ ফি বাবদ ১০০০৳টাকা।
৫. খতিয়ান প্রাপ্তির জন্য ১০০৳ টাকা।
 
এর বাইরে নামজারি করতে আলাদা কোন টাকার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অন্যান্য ফি যদি প্রদান করা হয় তবে আপনার জেনে রাখা ভালো যে তার ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদের মাধ্যমে সেই টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। 
 

উপসংহার

 
জমির নামজারি করার নিয়ম এবং নামজারি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী আজকে আমরা আলোচনা করেছি। জমি সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা এড়াতে এই তথ্যগুলো আপনার কাজে দেবে। নামজারি সম্পর্কে তথ্য জেনে যদি আপনার উপকার হয় তবে তা আপনি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।